
ইউটিউব বা ভিডিও মার্কেটিং –
ইউটিউবকে (Youtube) ব্যবহার করে কোন প্রোডাক্ট , সেবা বা বিজনেসের ব্র্যান্ডইং করাই হলো ইউটিউব মার্কেটিং বা ভিডিও মার্কেটিং। তবে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে, তার এড থেকে প্রাপ্ত অর্থকেও অনেকেই ইউটিউব মার্কেটিং বা ভিডিও মার্কেটিং হিসেবে বিবেচনা করে। বর্তমান সময়ের সব থেকে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে ইউটিউব। একটা সময় মানুষ সামাজিক যোগাযোগ বলতে শুধু মাত্র ফেসবুক কেই মনে করতো। কিন্ত বর্তমান সময়ে ইউটিউব এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে, ফেসবুক থেকে এখন মানুষ ইউটিউব বেশি ব্যবহার করে। আর এখন বর্তমানে সারা পৃথিবীতে গুগল এর পরেই ইউটিউব এর অবস্থান। পিছনে ফেলেছে সব থেকে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুককেও। অবশ্য আজকে আমরা এই দুটো বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
ইউটিউব মার্কেটিং জানার আগে আমাদের জানতে হবে অনলাইন মার্কেটিং কি ?
অনলাইন মার্কেটিং কি?
এমন একটি সময় ছিলো, যখন সবাই অনলাইন আয়ের প্রথম দিকে মানুষ শুধু ফ্রিলান্সিং এর মধ্যে ডুবে থাকতো এবং বাহিরে ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করত। কিন্তু এখন আমাদের দেশের মোটামুটি সবাই ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস তাদের টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছিয়ে আয় করে যাচ্ছে। নিজের পণ্য বা সার্ভিস ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রচার করাকে অনলাইন মার্কেটিং বলে। অনলাইন মার্কেটিং করার অনেক গুলো সিস্টেম রয়েছে। তন্মোধ্য ইউটিউব বা ভিডিও মার্কেটিং খুব ফলধায়ক।
ইউটিউব মার্কেটিং কি?
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। এই বর্তমান সময়ের সব থেকে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে ইউটিউব। কিন্ত ইউটিউব মার্কেটিং এর সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে না বুঝেই সেই দিকে ঝুকে পড়ি, যার ফলে দেখা যায় যে, সেই বিষয়টায় ব্যপক হারে স্পামিং বেড়ে যায় যা একজন ইউটিউবারের জন্য খুবই ক্ষতিকর । এই ব্যপারে সাধারণত যারা অভিজ্ঞ তারা মানুষকে নিজেদের টিপস বা অভিজ্ঞতা খোলাখুলি ভাবে দিতে চায় না। আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে কোন ইউটিউব মার্কেটারের সাথে পরিচিত থাকেন তবে তার কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন। আর যদি প্রশিক্ষন নিতে চান তাহলে উপযুক্ত যায়গা হবে আপনার পরিচিত কোন প্রশিক্ষণ ইন্সিটিউট। সঠিক গাইডলাইন ছাড়া ইউটিউবে সফল হওয়া খুবই কঠিন। তাই আপনি প্রথম থেকে শুরু করতে চাইলে ভাল কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ভাল বলে আমি মনে করি। তাছাড়া বর্তমান সময়ে এখন ইউটিউব আপনার জন্য সব থেকে বড় প্লাটফর্ম। আপনি সব কিছুই পাবেন এখানে। সুন্দর ও সাবলীল ভাষায়। তাই ইউটিউব মার্কেটিং শুরু করতে চাইলে ইউটিউব-ই হবে আপনার জন্য সব থেকে বড় প্লাটফর্ম। যেখানে আপনি নিজেও শিখতে পারবেন সাথে সাথে অর্থ উপার্জনও হবে।
ইউটিউব মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- বর্তমান সময়ে আর্টিকেল পড়ার চেয়ে ভিডিও দেখতে গ্রাহকরা আগ্রহী। অনেক বিষয় আছে যেগুলো আর্টিকেলে বুঝানো সম্ভব হয় না, সেগুলো সহজেই ভিডিওর মাধ্যমে বুঝানো যায়। এখন সাধারণত আর্টিকেল পড়ার ধৈর্য্য অনেকের নেই। সাধারণত এমন সব ক্রেতাদের লক্ষ্য করে ভিডিও মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। ফলে দেখা যায় খুব সহজে ব্যবহারকারীরা না পড়েও ভিডিও দেখে পণ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। এতে করে একসঙ্গে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ এবং প্রচারণা বৃদ্ধি পাবে।
- বর্তমান সময়ে আর্টিকেল শুধু যারা পড়তে পারে তাদের জন্য কিন্তু ভিডিও নিরক্ষর মানুষ বা বাচ্চারাও দেখতে পারে, তাতে মার্কেটারের উদ্দেশ্যও সফল হয়।
- একটি প্রোডাক্ট সুন্দর ভাবে কাস্টমারে নিকট প্রেজেন্টেশন করা খুব জরুরী। ছবি তুলে একটা পন্যকে যতটা আকর্ষণীয় করা যার ভিডিও করে তার চেয়ে ভালভাবে, বিভিন্ন আঙ্গিকে পন্যকে উপস্থাপন করা যায়। এতে কাস্টমার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটি নিতে আগ্রহী হয়।
- বর্তমান সময়ে ভিডিও মার্কেটিং বা ইউটিউব মার্কেটিং মোটেও ব্যয়বহুল না, ফলে সব ধরণের মানুষই ভিডিও মার্কেটিং ব্যবহার করতে পারে। অনেক সহজও বটে।
- যেহেতু গুগলের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন হলো ইউটিউব, ফলে তা সব রকমের গ্রাহক কাস্টমারের জন্য একটি উপযোগী মার্কেটপ্লেস। যেখানে সব ধরনের টার্গেট কাস্টমার পাওয়া যায়।
- ইউটিউব মার্কেটিং করতে হলে কি প্রয়োজন?
- নিজের ব্র্যান্ডিং বা ব্যবসায়ের জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করা।
- অডিয়েন্স বা কাস্টমারের পছন্দ অনুযায়ী ভিডিও তৈরি করে প্রতি নিয়ত আপলোড করা।
- ইউটিউব চ্যানেল এর এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) করা
- ইউটিউব চ্যানেলকে মার্কেটিং করা ও সাবস্ক্রাইবার বাড়ানো এবং টার্গেট অনুযায়ী অডিয়েন্স আনার।
- ইউটিউব এর পলিসি ও এলগোরিদম জানা, যাতে স্পাম না হয়।
কোন ধরণের ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করতে হবে?
- আপনাকে নিজস্ব ভিডিও তৈরি করতে হবে। অন্য কারো ইউটিউব চ্যানেল থেকে কোন ভিডিও কপি করে আপনার চ্যানেলে আপলোড করা যাবেনা। আপনার পূর্বে কেউ উক্ত ভিডিওটি আপলোড করে থাকলে তার কপিরাইট আপনার নয়। সুতরাং ইউনিক ভিডিও আপলোড করতে হবে। এমনকি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অন্য কারো হলে সেটাও সেটা আপলোড করা যাবেনা।
- ভিডিওর মাঝে কোন প্রকার অশ্লীলতা ব্যবহার করা যাবে না। যেকোনো বয়সের মানুষ যেন ভিডিওটি দেখতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
- ভালো কোয়ালিটি ও ভালো রেজুলেশনের ভিডিও তৈরি করতে হবে। ক্যামেরা আবশ্যক নয়, মোবাইল ফোনেও ভাল ভিডিও ধারণ করা যায়।
- ভিডিওর টাইটেল ইউনিক এবং খুব আকর্ষণীয় হতে হবে, দেখা যায় ভিডিওর কন্টেন্ট আহামরি ভালো না হলেও শুধু টাইটেলের জন্য প্রচুর ভিউ হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে টাইটেল যেন কন্টেন্টের সাথে অসামাঞ্জস্য না হয়। অসামানঞ্জস্য টাইটেলে রিপোর্ট পড়লে ইউটিউব ভিডিও ডিলেট করে দিতে পারে। এ বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।
- শর্ট লেন্থের ভিডিও বেশ কার্যকর। ৫ মিনিটের ভিডিওর ভিউ প্রচুর হয়। সাধারণত লেন্থ বেশী হলে ইউজারের বিরক্তি চলে আসে ফলে সে চলে যায় এবং তা চ্যানেল এর জন্য মোটেও ভাল নয়।
- অবশ্যই ভিডিওতে আপনার চ্যনেলের লগো ব্যবহার করবেন ও টেক্সট ব্যবহার করবেন যেখানে প্রয়োজনীয়।
- খুব আকর্ষণীয় একটি থাম্পনেইল ব্যবহার করুন, আকর্ষণীয় থাম্পনেইল প্রচুর ভিজিটরকে আকৃষ্ট করে। এবং ভিউ বেশি হয়।
সফল হতে হলে ইউটিউবের এসইও করতে হবে
ইউটিউব চ্যানেল বানানোই শেষ নয়। যদি প্রচুর সাবস্কাইবার ও ভিউয়ার পেতে হয় তবে অবশ্যই চ্যানেলটির সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) করতে হবে। ইউটিউবের এসইও করার পক্রিয়া হলো –
- চ্যানেলের আকর্ষণীয় নাম, লগো ও ডিসক্রিপশন নির্বাচন করতে হবে।
- চ্যানেলের শর্ট ও প্রাসঙ্গিক URL দিতে হবে। মনে রাখতে হবে অন্তন ১০০ জন সাবস্ক্রাইবার ও চ্যানেলের বয়স ৩০ দিন না হলে URL চেঞ্জ করা যায় না।
- চ্যানেলের কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে। সাধারণত যে সব কি-ওয়ার্ড দ্বারা আপনার চ্যানেলকে সার্চ করা হয়। সেক্ষত্রে ইউটিউবের সাজেস্টেড কি-ওয়ার্ডগুলো বেছে নিতে পারেন। কি-ওয়ার্ডগুলো অবশ্যই ট্যাগে ব্যবহার করতে হবে।
- প্রত্যেক ভিডিও টাইটেলে আপনার চ্যানেলের নাম দিতে হবে।
পরিশেষে বলি
একজন আদর্শ ইউটিউব মার্কেটার হতে হলে অবশ্যই কোয়ালিটি নিশ্চিত করা জরুরি। আমদের দেশে বেশিরভাগ ইউটিউবারই সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য বিভিন্ন স্পামিং বা অহেতুক ভিডিও পাবলিশ করে। যদি উপরোক্ত গাইডলাইন মেনে চলতে পারেন, আশা করি আপনি খুব ভালো ইউটিউব বা ভিডিও মার্কেটারে পরিণত হবেন। এবং আপনার সফলতাও দ্রুত আসবে।
.
সবাইকে ধন্যবাদ
Founder
Group Creator at Trust Market BD
Group Creator at Digital e-commerce Market Place.
Thanks
Thanks