থার্টি ফাস্ট নাইট এর ইতিহাস
দেবতা জানুস (Janus) ।
দুই মাথা বিশিষ্ট জানুস ছিল রোমানদের নিকট ভাগ্য দেবতা। প্রত্যেক রোমান বাসী মনে প্রাণে বিশ্বাস করতো জানুস দেবতাই তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। এই কারনে রোমানরা প্রতিবছর জানুসকে পূজা বা উপসনা করতো। জানুয়ারি মাসের নামকরণও করা হয় জানুস দেবতার নামানুসারে (ইন্টারনেট তথ্য সংগ্রহ) । যেহেতু রোমানরা জানুসকে ভাগ্য দেবতা মানতো তাই ওরা ৩১শে ডিসেম্বর রাতে জানুসের পিছনের মাথার সামনে গিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং পূজা করতো।
.
.
রোমানরা ওই রাত পেয়েছে তা সবই জানুসের পিছনের মাথার বদৌলতে। একারণে তারা আমোদ-ফুর্তিতেও মেতে উঠতো, কারণ ওদের বিশ্বাস ছিল গত বছর যত ভালো উৎযাপন করেছে, তা জানুসের বদৌলতে। যখনই রাত ১২টা বাজতো, রোমানরা জানুসের সামনের মাথার দিকে চলে যেত। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল আগামী বছর যদি ভালো কিছু পেতে হয়, তাহলে জানুসের সামনের মাথাকে খুশি করতে হবে। এই জন্যই রোমানরা প্রতিবছর জানুসের নিকট প্রার্থনা করতো। ৩১শে ডিসেম্বর সেই উৎসব-উদযাপন, পূজা- প্রার্থনা সবই ছিল জানুস দেবতা কেন্দ্রিক। সময়ের বিবর্তনে আজ যা হয়ে উঠেছে বিশ্বব্যাপী ‘’থার্টি ফাস্ট নাইট।
খ্রিস্টিয় বছর তথা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেবে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ দিবাগত রাতের ১২টা ১ মিনিটকে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করা হয়। বছরের শেষ রাতের এ মুহূর্তটি উদযাপন একটি খ্রিস্টিয় সংস্কৃতি। খ্রিস্টার্ণরা প্রতিবছর তারা এই রাতকে উৎযাপন করে থাকেন।
.
.
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উৎযাপন
- আমরা বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের অন্যতম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আমাদের দেশে এই রাত নাচ-গান, বেহায়াপনা এবং চরম অশ্লীলতার (ডিজে পার্টি) মাধ্যমে পালন বা উৎযাপন করা হয়।
- দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য এই যে, এই রাতে বহু তরুণ-তরুনীরা আধুনিকতার নামে তাদের চরিত্র হারাচ্ছে। এমনকি হত্যার মত জগন্ন্য ঘটনাও ঘটে থাকে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উৎযাপন
- বিশ্বব্যাপী ইসলামিক স্কলাররা ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উদযাপনকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ থার্টি ফাস্ট নাইট কোনো ইসলামিক সংস্কৃতি নয়। মুসলিম সভ্যাতা ও সংস্কৃতিতে এটি একটি অপসংস্কৃতি স্বরূপ। সে কারণে একজন রুচিশীল ও সচেতন ঈমানদার মুসলমান কখনো থার্টি ফাস্ট নাইট সংস্কৃতি উদযাপন করতে পারে না।
- থার্টি ফাস্ট নাইট খ্রিস্টিয় সংস্কৃতি । এই আবিষ্কারকদের উৎসব পালনের পদ্ধতি যেখানে কিছু কুসংস্কার ও কিছু শালীন-অশালীন কর্মকান্ড রয়েছে। যার কারণে ইসলামিক স্কলাররা এটিকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য ধর্মের কোন প্রকার সংস্কৃতি-উৎসব মুসলমানদের জন্য উদযাপন করা বৈধ নয়। বিজাতীয় সংস্কৃতি উদযাপনে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাও এমনই।
এ ব্যাপারে-
- পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুরাআনের সূরা আল-ইমরানের ৮৫ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যে ব্যক্তি ইসলাম (ইসলামি রীতিনীতি) ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে, কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ - এমন কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সঙ্গে আচার-আচরণে, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।’ (আবু দাউদ)
- প্রত্যেক জাতির জন্যই রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধান ও করণীয়। সে আলোকে মুসলিমদের জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুরাআনের সূরা আল-মায়েদার ৪৮ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ - মুমিন মুসলমান কখনো বিজাতীয় সংস্কৃতিতে নিজেকে জড়াতে পারে না। কেননা বিজাতীয় সংস্কৃতি বা উৎসব যদি কারো ভালো লাগে তবে সে মুমিন হতে পারবে না। হাদিসে এসেছে-
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যদি তুমি খারাপ কাজ করলে তোমার খারাপ লাগে, আর ভালো কাজ করলে ভালো লাগে, তবে তুমি মুমিন। কিন্তু যদি খারাপ কাজ করলে ভালো লাগে আর ভালো কাজ করলে খারাপ লাগে তবে মুমিন হতে পার না।’ (মুসলিম)
.
.
মনে রাখা জরুরি
যে সময়টিতে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করা হয়, সে সময়টি ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার সময়। এ সময়টিতে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে টগবগে যৌবনের লাগাম ছাড়া উন্মাদনা ও নেশা মেটানোর সময় হিসাবে বেছে নেয়া মারাত্মক অপরাধ।
এ ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা আছে যে, গভীর রাতের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে এসে আহ্বানকারীকে(সাহায্য প্রার্থীকে), অসুস্থ ব্যক্তিকে, ক্ষমাপ্রার্থীকে (চাহিদা অনুযায়ী) যা ইচ্ছা তা ডেকে ডেকে দিয়ে যান। (মুসলিম, মিশকাত)
আরো বর্ণিত আছে যে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, (যখন) ব্যক্তি ভোর অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়, অথবা সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর অতিবাহিত করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার সামান্য কিছুর বিনিময়ে।’ (মুসলিম)
সুতরাং একজন প্রকৃত মুমিন মুসলমানের উচিত, থার্টি ফাস্ট নাইট নামক উৎসবে নিজের উৎসব মনে করে যোগদান কিংবা উদযাপন করা থেকে বিরত থাকা। ইসলাম নির্ধারিত বিধি-বিধান মেনে চলা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক জ্ঞান দান করুন ও বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন্
.
আমাদের আরো পপুলার আর্টিকেল-
-
পৃথিবীতে ভাষ্কর্য তৈরির সূচনা হলো যেভাবে
-
যে অন্য জাতির দালালি করার জন্য তার স্বজাতির সাথে অনায়াসে এমন গাদ্দারি করতে পারে, তার এই পরিণতিই হওয়া উচিত
-
বিশ্বের সেরা ১০ বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশের তনিমা তাসনিম অনন্যা ( কৃষ্ণগহ্বর গবেষণা )
-
বিজয় দিবস (বাংলাদেশ) এর ইতিবৃত্ত
-
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এর ইতিবৃত্ত
-
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ এর বিধান