বর্তমান সময়ে অনলাইন উদ্যোক্তা হতে যেই ১০ টি গুন আপনার অবশ্যই থাকতে হবে
শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারছেন আজকের লেখাটি তাদের জন্য যারা অনলাইন উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতেছেন। লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়েবেন কেননা একটু গভীর চিন্তা ভাবনার ব্যাপার আছে। নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে লিখছি। তাই আপনার যদি কোনো পয়েন্ট সম্পর্কে আরো কিছু যোগ করার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এ জানাবেন।
আর দেরী না করে চলুন জেনে নেই, বর্তমান সময়ে অনলাইন উদ্যোক্তা হতে গেলে যেই ৫ টি গুন আপনার মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে।
.
১. নিজেকে মূল্য দিতে শিখুন
কথাটা শুনে হয়তবা অবাক হলেন ? অবাক হবারই কথা। বর্তমানে আমাদের দেশে এমন অনেক লোক আছে, তারা নিজের মূল্য নিজেরাই জানে না। সবার আগে আপনাকে আপনার নিজের মূল্য দিতে শিখতে হবে।অনেকেই নিজের কাজের ভ্যালু জানেন না। কেউ কেউ বাইরের ক্লায়েন্ট এর থেকে পাওয়া অল্পরেটের প্রস্তাবেই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস দিতে রাজি হয়ে যান। অনেকে এ ক্ষেত্রে কাজের স্বল্পতা বা অর্থের অভাবকে কারন হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু আপনি যদি আদৌ কষ্ট করে কোনো কিছু শিখে থাকেন, আপনার সার্ভিস যদি কোয়ালিটি পূর্ণ হয় আর আপনি যদি সময়ের সঠিক মুল্য দিতে জানেন তাহলে অবশ্যই কম রেট এ কাজ করতে গেলে আপনার বিবেকে আপনাকে বাধা দিবে। তাই আপনি যদি অনলাইন একজন উদ্যোগতা হতে চান তাহলে আগে নিজের কাজেকে ভ্যালু দেয়া শিখুন। না হয় আপনার নিজের প্রতিষ্ঠান চালানো আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। নিজের প্রত্যেক কাজে নিজেকে নিজেই উপহার দিন। তাহলে দেখবেন আপনার ইচ্ছা শক্তি দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সময়ে ৯৯% লোক তাদের নিজের ভালো কাজের জন্য নিজেই উপহার দেয় না। যার জন্য সেই কাজ করা ইচ্ছা শক্তি আর বৃদ্ধি পায় না। নিজেকে গতিশীল রাখতে প্রত্যেক ভালো কাজ বা প্রত্যেক সফলতা অর্জনের পর নিজেকে ছোট পরিসরে হলেও উপহার দিন।
.
২. চিন্তাকে প্রাধান্য দিন, মন কে নয়
বর্তমানে সময়ে অনেকেই আবেগবশত “ফেসবুকে ই-কমার্স পেইজ কিংবা ই-কমার্স ওয়েবসাইট ” খুলে বসেন। আপনি যদি অনলাইন এ ভালো সুনাম অর্জন করতে চান তাহলে মনের আবেগে কিংবা দ্রুত টাকা আয়ের জন্যে প্রোপার নলেজ ছাড়া অনলাইনে ব্যবসা করা শুরু করবেন না। এতে আপনার ক্ষতি হবে , টাকা – সময় উভয়ই ক্ষতি হবে। আগে নিজে শিখুন এবং লক্ষ্য স্থির করুন। ট্রেনিং সেন্টার ছাড়াও সার্ভিস সেল করেও আপনি একজন অনলাইন উদ্যোগতা হতে পারেন।
.
৩. নতুনত্ব শেখার মনমাসিকতা তৈরি করুন
প্রথমেই বলবো, আপনি যদি উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে প্রথমে নিজের কাজের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হন। এতে করে আপনার কাজের স্কিল বাড়বে এবং আপনি আরো অনেককে কাজের সুযোগ তৈরী করে দিতে পারবেন। যারা শেখার চেষ্টা এবং নিজের কাজ বাদ দিয়ে অন্যকে শেখানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছেন তাদের অধিকাংশই মার্কেট এ টিকতে পারেননি, আর যারা শিখেছেন বর্তমান বাজার তারাই রাজত্ব করতেছেন । আপনি যদি সত্যিকার্থে সফল হতে চান তাহলে অনবরত শেখায় মনোনিবেশ করুন। ই-কমার্স এমন একটি সেক্টর যেখানে প্রতিদিন ই নিত্য নতুন কৌশল শিখতে হয়। আপনাকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই নতুন বিষয় গুলোর ব্যাপারে আপডেট থাকতে হবে, না হলে আপনি ঝরে পড়বেন।
সুতরাং নতুনত্ব শেখার মনমাসিকতা তৈরি করুন।
.
৪. যে কোন একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকে ফোকাস করুন
বর্তমান সময়ে অনেকেই অনেক গুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে কাজ করতে চান। কিছুদিন পর দেখা যায়, তার কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সফলতার মুখ দেখতে পায় না। আপনি যদি প্রথমে যে কোন একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে কাজ করেন, এবং সেই বিষয়ে পরিচিত হতে পারেন, তাহলে দেখবে একে একে আপনার সব সেক্টরে সফলতা চলে আসছে।
৫. ধৈর্যশীল হন
অন্যান্য সকল ব্যবসার মত অনলাইন সেক্টরেও ধৈর্যশীলতা খুবই খুবই প্রয়োজন। এখানে আপনি কাজ করবেন এবং উন্নতি করবেন শুধু মাত্র আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে। তাই যতক্ষন না আপনি দক্ষ হতে পারছেন ততক্ষন আপনাকে লেগে থাকতে হবে। যদি সেই ধৈর্য আপনার না থাকে তাহলে আপনার এই অনলাইন ব্যবসা না। এই সেক্টরে প্রথমে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। যে ধৈর্য ধারণ করে টিকে থাকবেন, আগামীতে সেই এই সেক্টরে রাজত্ব করবেন।
ধৈর্য্যশীল হতে হবে এবং কষ্ট করতে হবে-
একজন উদ্যোক্তার চিন্তা থাকে ভালো পন্য নিয়ে কাজ করার, সেজন্য তার ভালো পন্যের উৎস খুজতে হয়। পন্যটা দূর থেকে নিয়ে আসতে হয়। পন্যের ফটোগ্রাফি করা লাগে । পন্যের সম্পর্কে প্রচার করা লাগে। তারপর আবার ক্রেতাদের বিভিন্ন কথা শোনা লাগে। আবার ইনবক্সের ক্ষেত্রে অনেক ফেইক আইডির ভিন্ন ভিন্ন বিরক্তকর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া লাগে। আবার পন্য অর্ডার হলে তা সঠিক ভাবে ক্রেতার কাছে পৌছে দেবার জন্য কষ্ট করা লাগে ।
.
৬. “আপনিই সর্বোত্তম” এই বিশ্বাস করুন
স্টিভ জবসকে তো আমরা সবাই ই চিনি। যার কারনে Apple হয়েছিল আমেরিকান স্টক মার্কেট এর সব থেকে দামী প্রতিষ্ঠান। জবস কখনো মোটামোটিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি সর্বোত্তম এ বিশ্বাস করতেন। তার এই এক গুয়েমির কারনে তাকে Apple এর থেকে সরিয়েও দেয়া হয়ে ছিল। পরবর্তীতে Apple এর যে কি দূর অবস্থা হয় সেটা আমরা কম বেশী সবাই ই জানি।
কিন্তু তিনি যখন আবার ফিরে এলেন তখন কোম্পানির অবস্থাটাই পাল্টে গেল। ২ বছরের মাথায় যেই Apple স্টক মার্কেট এ কোনো অবস্থানই ছিলনা না সেটা হয়ে গেল স্টক মার্কেট এর সব থেকে দামী কোম্পানি। ভেবে দেখুন না, এখনো একজন আইফোন ব্যবহারকারী তার ডিভাইসটা নিয়ে যেই পরিমান গর্ব অনুভব করে, তেমনটা অন্য কোনো ব্র্যান্ড ব্যবহারকারীরা কখনই করবে না। তাই আপনিই সর্বোত্তম এই বিশ্বাস করুন।
.
৭. সফলদের পথে কঠোর পরিশ্রম করুন।
সবসময় সর্বোত্তমদের সাথে কাজ করার চেষ্টা করুন, এবং সর্বোত্তম হবার চেষ্টা করুন। খ্যাতি এবং সুনাম আসবেই।
যারা সব সময় সব থেকে ভালো কিছু করার চেষ্টা করেন, তাদের সাথে কাজ করাটা যদিও একটু কঠিন। তবুও কষ্ট করে লেগে থাকতে হবে, কচ্ছপের ন্যায় আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে হবে, কখনই থেমে থাকা যাবে না । তাই সেরা হতে হলে একটু কষ্ট আপনাকেও করতে হবে।
.
৮. হিসাবী হয়ে উঠুন
অনেকের মতে অনলাইনে খুব সহজেই এবং খুবই কম খরচেই ব্যবসা শুরু করা যায়। কথাটা একদম ই ভুল। সব সেক্টর এর মত, এই সেক্টর এও কম বেশি মূলধন এর দরকার হয়। আর সব সেক্টর এর মত এখানেও “সস্তার তিন অবস্থা কথাটা খুবই সত্য”। তাই আপনি যদি সিরিয়াসলি কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ভালো মার্কেটিং, ভালো ওয়েবসাইট এর সংস্পর্শে এবং ভালো লাভ হয় এমন অনলাইন বিজ্ঞাপনে খরচ করতে হবে। আপনি অপব্যয়ী হন, তাহলে অর্থের অভাবে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। আপনাকে প্রত্যেকটি হিসাব সূক্ষ্ণ ভাবে লিপিবদ্ধ রাখতে হবে। তাই, আপনি যদি একজন অনলাইন উদ্যোক্তা হবার চিন্তা করে থাকেন তাহলে আজ থেকেই হিসাবী হয়ে উঠুন। অর্থ এবং সময়, দুই দিক থেকেই। তাহলেই আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
৯. নতুন সম্পর্ক তৈরি করা
একজন উদ্যোক্তার ভিন্ন ভিন্ন বিষয় গুলো নিয়ে ভিন্ন মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হয়। উদ্যোক্তা জীবনে আপনার অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। অনেক সুসম্পর্কের সৃষ্টি হয় । অনলাইন উদ্যোক্তার জন্য এটা খুবই প্রয়োজন। যার যত বেশি পরিচিতি থাকবে, তার সফলতা দ্রুত আসবে।
১০. অবসার সময়কে কাজে লাগান-
অনলাইনে উদ্যোক্তা হতে অবশ্যই আপনাকে অবসর সময় কে কাজে লাগাতে হবে। আগে যেখানে আপনি আপনার সময় টা ঘুমিয়ে, টিবি দেখে কাটাতেন, সেই সময়টা এখন আপনি কিভাবে আপনার স্বপ্ন পূরন করবেন, সেই বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে কাজ করতে হবে। অনলাইন উদ্যোক্তার প্রথম দিকে কখনই কোন অবসর সময় রাখা যাবে না। সফল হওয়ার পর দেখবে, অবসর সময় কাটানো অনেক সময় পাবেন।
.
আপনার কি মতামত লিখুন ?
আজকে এই পর্যন্তই। আপনি কি ভাবছেন? আপনার পরিকল্পনা কি ? চাইলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আমরা আমাদের এক্সপেরিয়েন্স থেকে যতটুকু সম্ভব আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করব। যদি লেখাটি ভালো লাগে তাহলে লেখাটি শেয়ার করুন।
পরবর্তীতে কোন বিষয়ে লেখা দেখতে চান কমেন্ট করেন ।
Thanks
ধন্যবাদ
Thank you
Thanks