আপনি যদি বিগত কয়েক বছর কোন ফেসবুক পেইজ পরিচালনা করে থাকেন। তাহলে নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন যে, সময়ের সাথে সাথে আপনার পোষ্টের রিচ কমে আসে। ফেসবুক পোষ্টের এই রকম অরগানিক রিচ কমে আসাটা ২০১৪ থেকে শুরু হয়েছে। এটা মূলত ২টি কারণে হয়ে থাকে।
.
.
প্রথমত, ফেসবুক –এ প্রতিনিয়ত সহস্র পোষ্ট প্রকাশিত হয়। এত গুলো কন্টেন্টের মধ্যে আপনার পোষ্টটি আপনার ফ্যানদের নিউজফিডে ভিজিবিলিটি লাভ করা কিছুটা প্রতিযোগিতামূলক।
.
দ্বিতীয়ত, ফেসবুক শুধু মাত্র তার ইউজারদের ঐ কন্টেন্ট গুলো Show করে যেগুলো তাদের সাথে প্রাসঙ্গিক।
Facebook এর এই বৈশিষ্টে্র সাথে তাল মিলিয়ে পোষ্ট রিচ বৃদ্ধি করার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমনঃ ফেসবুক এ আপনার কন্টেন্ট পোষ্ট করার সময় প্রাসঙ্গিকতার দিকে লক্ষ্য রাখুন অথবা আপনার পোষ্টের রিচের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে এর পেছনে অর্থ ব্যয় করুন।
.
১. কিভাবে ও কেন সময়ের সাথে সাথে ফেসবুক এর অরগানিক রিচ কমে যায়?
আপনার পেজে পোষ্টকৃত কন্টেন্ট কতটা Reach লাভ করবে সেটা ফেসবুক নির্ধারন করে। একটি পরিসংখ্যানের মাধ্যমে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারী ২০১৩ থেকে ২০১৫ এর মধ্যে ফেসবুক পেজের অরগানিক Reach কমে গড়ে ১৫% থেকে ৫.৫% এ এসে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ধারনা করা যায়, আপনার পেজে যদি ১০০০০ ফ্যান থাকে তাহলে আপনার পোষ্টকৃত কন্টেন্টটি আনুমানিক ৫৫০ জনের নিউজ ফিডে –এ Show করবে। অল্প সংখ্যক পোষ্ট Reach এর কারণে ক্লিক, কমেন্ট এবং শেয়ার ও কম থাকে।
.
২. অর্থ ব্যয় = ভিজিবিলিটি
বর্তমানে ফেসবুক –এ শুধু অরগানিক উপায়ে রিচ লাভের পাশাপাশি পেইড মার্কেটিং এর মাধ্যমে অতিরিক্ত রিচ লাভের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তাই ফেসবুক পেজ পরিচালকরাও উপলব্দি করেছে যে পেইজে নতুন ফ্যান বৃদ্ধিতে পোষ্ট রিচ বৃদ্ধি করতে অবশ্যই পেইড অ্যাড এর সাহায্য নেওয়া উচিত।
.
৩. ফেসবুক পেজের অ্যালগরিদম কিভাবে কাজ করে?
যখন ২০০৬ সালে ফেসবুক নিউজফিড শুরু করে তখন নিউজফিড খুব সাধারণ উপায়ে কাজ করত। এক এক ধরনের পোষ্টের জন্য এক এক রকম পয়েন্ট ভ্যালু নির্ধারন করা হত। যেমনঃ একটি পোষ্ট যেটা কিনা টেক্সট সম্বলিত সেটির এক ধরনের পয়েন্ট ভ্যালু। আবার যেইসব পোষ্টে টেক্সট এর সাথে লিঙ্ক থাকে সেটির দুইধরনের পয়েন্ট ভ্যালু। এইভাবে পোষ্টের পয়েন্ট ভ্যালু বৃদ্ধির মাধ্যমে People এর Interaction বৃদ্ধি করা যায়। ফলশ্রুতিতে পোষ্ট এর রিচ বাড়ে।
সময়ের সাথে সাথে নিউজফিডের অ্যালগরিদম চাহিদার ভিত্তিতে কাজ করছে। যেমনঃ এক ব্যক্তির পোষ্টকৃত কন্টেন্টে অন্যব্যক্তি আলাপচারিতার মাধ্যমে Engagement তৈরি করার প্রক্রিয়াকে Edge Rank বলে। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে অ্যালগরিদমের কার্যপ্রক্রিয়া আরও জটিল রুপ ধারণ করাতে ফেসবুক –এ Edge Rank প্রক্রিয়াটি প্রাধান্য কম পাচ্ছে। অ্যালগরিদমের এই জটিল প্রক্রিয়ার কারণেই আপনার পোষ্টটি আপনার ফ্যানদের নিউজফিড হতে হারিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও বর্তমানে অ্যালগরিদম শুধুমাত্র ইউজারদের Preference কে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি আপনার নিউজফিডে আগত ফটো বা পোষ্ট গুলো গুরুত্ব না দেন বা Engagement তৈরি না করেন তাহলে অ্যালগরিদম সেই বিষয়টি নজরে রাখে এবং আপনার নিউজফিডে কম ফটো বা পোষ্ট প্রদর্শন করে।
এর মানে এই দাড়ায় যে, আপনার পেজে যারা লাইকস দিয়েছেন তারা আপনার পোষ্টে Engagement তৈরি না করলে পরবর্তীতে তারা আপনার পোষ্ট দেখতে পাবে না।
.
.
কিভাবে অরগানিক রিচ কমে যাওয়াকে মোকাবেলা করতে হবেঃ
=======================================
১। একজন মার্কেটারকে কখনোই কোন লক্ষ্য ছাড়া কন্টেন্ট পোষ্ট করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, কন্টেন্টিকে শুধু পোষ্ট করাই লক্ষ্য নয় কাস্টমারদের আলাপচারিতার মাধ্যমে এটি যেন সর্বোচ্চ রিচ লাভ করতে পারে এই রুপ লক্ষ্য নির্ধারন করতে হবে। একটি ব্রান্ড পেজের প্রতিটি পোষ্ট সুনির্দিষ্ট Audience কে টার্গেট করে পাবলিশ করলে এটি নির্দিষ্ট Audience এর সাথে Interaction তৈরি করে। অন্যান্য আগ্রহী এবং রিলেটেড Audience এর কাছে পোষ্টটি প্রদর্শন করতে সাহায্য করে।
.
২। আপনার ফ্যানদের মনে করিয়ে দিন যে, তাদের নিউজফিডের বাম পাশে তাদের লাইককৃত পেজের লিস্ট রয়েছে। যেখান থেকে আপনার পেজটিতে ক্লিক করে আপনার কন্টেট গুলো তারা দেখতে পারবে।
.
৩। আপনার নিয়মিত ফ্যানদের জানিয়ে দিন তারা চাইলে আপনার পেইজ এর কার্যক্রম Notification এর মাধ্যমে জানতে পারবে। সেই সেটিংস তাদের ইচ্ছানুযায়ী তারা আপডেট করতে পারবে।
.
৪। ফ্যানদের উৎসাহিত করুন আপনার পোষ্ট –এ লাইক, কমেন্ট, করে Engagement তৈরি করার জন্য যাতে তারা আপনার পেজের আরও পোস্টগুলো নিউজফিডে দেখতে পায়। বিষয়টা এমন হতে পারে যে আপনার পোষ্টের শেষে (Please like and share) এই লাইনটি যুক্ত করতে পারেন।
.
৫। আপনার ব্রান্ড Asset এর জন্য যথার্থ সময় বরাদ্দ করুন। আপনার পেজের কন্টেন্ট ও ব্লগ রচনার ক্ষেত্রে সময় ও গুরুত্ব দুটিই বিনিয়োগ করতে হবে। এতে করে আপনার কাস্টমার এর দৃষ্টি আকর্ষন এর মাধ্যমে Traffic বাড়ানো সম্ভব । এইভাবে সময়, বাজেট ও গুরুত্ব বিনিয়োগ করে অরগানিক রিচের পাশাপাশি এডিশনাল রিচ ও বাড়ানো সম্ভব।
.
৬। ফেসবুককে পেইড অ্যাড প্লাটরফর্ম হিসেবে বিবেচনা করুন। যদি আপনি রিচ বৃদ্ধির জন্য অর্থ ব্যয় করতে চান তাহলে আপনার টার্গেট মার্কেট ও ইউজার নির্ধারন করুন। যখন টার্গেটেড ইউজার নির্ধারন করবেন তখন আপনার অ্যাড কন্টেন্ট, ব্লগ, ই-বুক, ইত্যাদির প্রতি নজর দিন। তারপর আপনি টার্গেটেড ইউজারদের জন্য অ্যাড পোষ্ট করুন।
.
৭। পেইড অ্যাডভারটাইজমেন্টের পরিকল্পনা তৈরি করার পূর্বে টার্গেটেড সিটি, জেন্ডার, বয়স ও অডিয়েন্স ইন্টেরেস্টের প্রতি গুরুত্ব দিন।
..…
.
.
.
.
.
.
.
.
সব শেষে আপনাকে বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি , আমাদের এই ছোট্ট উদ্যোগটি আপনাদের যদি ভালো লাগে তবে সর্বদা আমাদের পাশে থেকে আমাদের সাহস বাড়াতে পোস্ট গুলোতে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করে আমাদের কাজের স্পৃহা আরো বাড়িয়ে দিতে আপনারা বিশেষ ভূমিকা রাখবেন এবং সেই সাথে আপনার একটি শেয়ার হয়তো আপনার নিকটস্থ কারো জন্য একটি নতুন দরজা খুলে দিতে পারে । সেই আশা বাদ ব্যক্ত করে সবাইকে আবারো ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিচ্ছি। আজ এ পর্যন্ত । সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন। দেখা হবে পরবর্তী নতুন কোন আর্টিকেলে। আল্লাহ হাফেজ।