Review

বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় বিশেষ কয়েকটি আমের জাত ও পরিচয়

SM ALAMGIR

সামনে আসতেছে মধুমাস..বিচিত্র স্বাদের কত রকমের আমে যে বাজার ছেয়ে যাবে তা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায় সবার।
আজ আমি জানাবো চাঁপাই নবাবঞ্জের জনপ্রিয় কয়েকটি আম সম্পর্কে সকল তথ্য-উপাত্ত। আশা করি, সাথেই থাকবেন।
.
.

➤গুঠি/ আঁটি আম

 

এই আম গুলো মুধু মাসের প্রকাশ ঘটায় কারণ সবার প্রথমে এই আম গুলো পরিপক্বতা নিয়ে আমাদের মাঝে আসে।এই ধরণের আম কাঁচা সময় ভীষণ টক স্বাদ যুক্ত হইলেও পরিপক্ব হইলে এই আম হয় দারুণ মিষ্টি ও সুস্বাদু। গুটি জাতের আম হয় বিভিন্ন বর্ণের ও আকৃতির।(এই বছরে পাওয়া যাবে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর)
.
.

➤গোপালভোগ আম

বাংলাদেশে উৎকৃষ্ট জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ অন্যতম। মৌসুমের শুরুতেই সবার আগে বাজারে চলে আসে এই সুমিষ্ট স্বাদের এই আমটি। এ আমটি একটু লম্বা ও অনেকটাই গোলাকার হয়। এর বোটা শক্ত, পাকার সময় বোটার আশেপাশে হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে, অন্য অংশ কালচে সবুজ থেকে যায়। আমটির আঁশ নেই। আমটি খেতে খুবই মিষ্টি হয়। এই গোপালভোগ আমটি আকারে হয় ছোট ও মাঝারি সাইজের, এই আমের শরিরে সাদা সাদা হালকা বল প্রিন্ট এর মত ছিট দেখা যায়। কিছুটা কালচে সবুজ তবে পাকলে আম হলুদাভ সবুজ দেখায়। এই আম পাকলে খোসা পুরোপুরি হলুদ হয়না  এই আমের আঁটি পাতলা হয় । এই আমটি বাজার থেকে দ্রুত নাই হয়ে যায় মাত্র ৭/১০ দিনের মধ্যে। (এই বছরে পাওয়া যাবে মে মাসের শেষ সপ্তাহে)
.
.

➤হিমসাগর আম

পশ্চিমবঙ্গের জাতের নাম যদিও হিমসাগর যা রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় খির্সাপাত নামে বেশী জনপ্রিয়। যদিও ঢাকায় এই আম হিমসাগর নামেই বাজার দখল করে রাখে। আমের আকৃতি খুবি আবেদনময়ী, কিছুটা গোলাকার, নাদুসনুদুস এই আমের ওজন ১৭০ থেকে ৩৫০/৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। একটু বেশী আবেদনময়ী হওয়ায় এই আমের দেহাবরণ কিছুটা ভারি, পর্দানশীল আম কিনা। দেহাবরণ সবুজ, পাকলে হলুদাভ সবুজ বর্ণ ধারণ করে।

দেহাবরণ উন্মুক্ত করলেই ভেসে উঠবে আঁশবিহীন, রসালো, মিষ্টি এক কড়া হলুদ দেহ, যা একবার খাওয়ার পর আপনি হারিয়ে যেতে পারেন অন্য এক দুনিয়ায়। এই আম সাধারণত জুনের শুরু থেকে পাড়া শুরু হয়, জুন শেষ হওয়ার আগেই বাজার থেকে এই আম হারিয়ে যায় আড়ালে আবডালে। (এই বছরে পাওয়া যাবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে)

.
.

➤ল্যাংড়া আম

ল্যাংড়া আম বা বারানসী আম হল আমের একটি বিখ্যাত জাত যা ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে চাষ করা হয়।

এটি ভারতের অন্যতম একটি বিখ্যাত আম। এটি পশ্চিমবঙ্গ সহ সমগ্র উত্তর ভারতে চাষ করা হয়। এই আম পাকার পর খানিক হলদে রঙের হয়। রাজশাহীতে ল্যাংড়াকে বলা হয় আমের রাজা। এটি অনেকটা গোলাকার আম। হালকা সবুজ রঙের খোসা, পাকলেও হলুদ হয়না তেমন। খোসা খুবই পাতলা হয়। এর শাঁস হলুদ বর্ণের। এই আম অনেক রসালো। অসাধারণ একটা ঘ্রান আছে এই আমের। মুখে দিলে রসে পরিপূর্ণ হয়ে স্বাদের জগতে হারিয়ে যায় মন। বাজারে সব থেকে বেশি বিক্রি হয় ল্যাংড়া জাতের আম।  (এই বছরে পাওয়া যাবে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর)
.
.

➤লক্ষণভোগ আম

লক্ষনাভোগ আম লখনা নামেই বেশি পরিচিত। লক্ষণভোগ আমের আঁশ খুবই কম। এর রং ও গন্ধ অসাধারন। খোসা কিছুটা মোটা হলেও আটি পাতলা। এই আম অগ্রিম প্রজাতির আম হওয়ায় আমের মৌসুমের শুরুতেই পাওয়া যায়। এটা অতুলনীয় মিষ্টি স্বাদযুক্ত এবং সুগন্ধ। লক্ষণভোগ আম পাকার পরেও ৬-৮ দিন ভাল থাকে। এই আমটি ওজনে ১৫০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ১০০% ক্ষতিকর কেমিক্যাল মুক্ত রাজশাহীর আম। কাঁচা অবস্থাতে হালকা সবুজ এবং পাকলে টকটকে হলুদ রং ধারণ করে। এটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের হয়। এর শাঁস লালচে হলুদ ও একটু শক্ত হয়। অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত এ আমটি খেতে মিষ্টি হয়। রাজশাহীর চারঘাট ও পুটিয়া, নাটর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এই আম বেশি চাষ হয়। এর অপর নাম বারি আম-২।  (এই বছরে পাওয়া যাবে মে মাসের শেষে এবং জুন মাসের শুরুতে)
.
.
.

➤আম রুপালি আম

আম রুপালি আম জনপ্রিয়তার ২ নাম্বার শীর্ষ তালিকায় আছে।  আমাদের দেশে এই জাত আসে ৮০/৮৫ সালের দিকে।

শুরুতে এই আম শুধু রাজশাহী অঞ্চলে চাষ করা শুরু হলেও বর্তমানে রাঙ্গামাটি,বান্দরবান সহ পাহাড়ি অঞ্চলেও এই আমের চাষ হচ্ছে।  আম্রপালি আম কিছুটা ছোট হয় আকারে, লম্বাটে এবং নিম্নাংশ কার্ভি, পোক্ত অবস্থায় সবুজ, অথবা লালচে হলুদ কালার এর দেহাবরণ,পাকার পরে আকর্ষনীয় রং ধারণ করে। সেই পোশাকের ভেতর লুকিয়ে রাখা কড়া মিষ্টি আঁশবিহীন লোভনীয় এক মাংসল দেহ। এই আমের খোসা অনেক মসৃণ হয়।  এই আম গাঢ় মিষ্টি। তবে এই আম খুব বেশি পেকে গেলে গলে যায় আর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই পাকতে শুরু করলেই খুব বেশি না পাকিয়ে খেলেই বেশি মজা লাগে। এই আম পাকা শুরু করে জুনের শেষ থেকে জুলাই এর শুরুর দিকে। আমের ওজন বলতে গেলে ৫/৬ টি আম ধরে প্রতি কেজিতে। (এই বছরে পাওয়া যাবে জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে)

.
.
.

➤আশ্বিনা আম

নাবি জাতের আশ্বিনা আম হয় কালচে সবুজ রঙের। এই আম কাঁচা অবস্থায় খুব বেশি টক। কিন্তু পাকলে মিষ্টি হয়। তবে খুব গাঢ় মিষ্টি হয়না। এই আম সাইজে বড় হয়। বাজার থেকে সব ধরনের আম যখন শেষ হয়ে যায় তখন আশ্বিনা আম বাজার দখল করে। এই কারণে আমটি উৎকৃষ্ট জাতসমূহের তুলনায় মানের দিক থেকে কিছুটা নিম্ন হলেও, এর চাহিদা এবং বাণিজ্যিক সফলতা অনেক উৎকৃষ্ট জাতের চেয়ে ঢের বেশি। আকার আকৃতি ওজনে আমটি প্রায় ফজলীর কাছাকাছি, তবে গুণে ফজলীর তুলনায় বেশ নিম্নমানের।

ফলটি কিছুটা তির্যকভাবে ডিম্বাকৃতি ও সামান্য চ্যাপ্টা। ত্বকের রং কালচে ও সবুজ। নিচের দিক ছুচালো। আমটি পাকলেও সবুজ থাকে। খোসা মাঝারি মোটা। শাঁস সাধারণত হলুদ ও হলুদাভাব কমলা। অনেক আমের শাস কমলা লাল হয়ে থাকে। আঁটিতে আঁশ নেই। আমটি আহারপযোগী অংশ শতকরা ৭৭ ভাগ। গাছে মুকুল আসার পর ফল পরিপক্ব হতে সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। ফল পাড়ার পর পাকতে ৭ থেকে ৯ দিন সময় নেয়। একেকটি গাছে প্রচুর ফল ধরে। প্রতি বছর নিয়মিত ফল না-ও ধরতে পারে। গাছ মাঝারি থেকে দীর্ঘ ও ছড়ানেরা হয়ে থাকে। আশ্বিনা আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী এবং নাটোর জেলায় বেশি পরিমাণে জন্মে থাকে। এ সকল জেলাসমূহের ছোট-বড় আমবাগানে মালিকগণ সাধারণত ফজলী এবং আশ্বিনা আমকে কেন্দ্র করেই নিজেদের আর্থিক সফলতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে চলেছেন। (এই বছরে পাওয়া যাবে জুলাই মাসে)

.
.
➤ফজলি আম
ফজলি আম একপ্রকার আম যা আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও মিষ্টি। ফজলি বা ফকিরভোগ মৌশুমি ফল আমের একটি প্রকারভেদ। টুকটুকে সবুজ রঙের ফজলি আম। টক গন্ধযুক্ত মিষ্টি স্বাদের এই আমের আকার অনেক বড় হয়। কখনো কখনো একটা আম এক কেজি বা এর বেশিও হয়। এই আম কাঁচা অবস্থায়ও টক মিস্টি স্বাদ। এই আম পাকলে মিষ্টি, তবে গাঢ় মিষ্টি হয় না। এই ফল দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বদিকে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও বিহারে পাওয়া যায়। আমের অন্যান্য প্রজাতির থেকে দেরিতে ফলে এই ফসল । (এই বছর পাওয়া যাবে জুন মাসের শেস সপ্তাহে )।

..

..

ধন্যবাদান্তে-

.
.
.

.

.

.

.

আমাদের আরো পপুলার আর্টিকেল

 

Spoken English Course :

Model Test :

Health Tips :

Outsourcing/Online Income :

Others Articls :

One Comment

  1. অজানা তথ্য জানলাম ধন্যবাদ ভাইয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button