আজকের দিনে আমার জীবনে সাথে ঘটে যাওয়া কিছু বিস্ময়কর কাহিনী বলবো-
আজ ১৩ এপ্রিল ২০২১ , রোজ মঙ্গলবার। আগামীকাল মানে ১৪ এপ্রিল প্রথম রোজা। আবার শুনাও যাচ্ছে, প্রথম রোজ থেকে আবার লক ডাউন শুরু। সব মিলিয়ে কেন জানি থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। যেহেতু প্রথম রোজ বাজার তো করাই দরকার। সকাল ১০ টার দিকে আমার হোমমিনিস্টার (স্ত্রী) হাতে ৬০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল- “জলদি বাজার নিয়ে আসো। তা না হলে, কপালে খারাপ জুটবে না। ” কি আর করার টাকা টা পকেটে নিয়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করে বাজারের দিকে রওনা হলাম।
আমার বাসা 180/6 21/1 তিতাস রোড, পূর্ব রামপুরা, ঢাকা। নিজেকে অনেকটা বনশ্রীতে থাকি বলে পরিচয় দেই। বাড়ির সামনেই মসজিদ। মসজিদের পাশ দিয়ে দুটো রাস্তা । একটি পশ্চিম দিকে চলে গেছে, আরেকটি উত্তরদিকে চলে গেছে। উত্তরদিকের রাস্তা ধরে হাঠতে লাগলাম। দীর্ঘ 20 মিনিট হাটার পর একটি বাজার দেখতে পেলাম। অথচ পরে জানতে পারলাম পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে ২ মিনিট সময় হাটলে বাজার পাওয়া যায়।
যাই হোক, নিজেকে একপ্রকার বোকা মনে করে বাজারে প্রবেশ করলাম। আগামীকাল রোজা, তারপর আবার লক ডাউন। বাজারের পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। প্রথমে মাছের বাজারের গিয়ে মাছ না পেয়ে, একটি জেনারেল স্টোরে এসে ৬৫ টাকা দরে ৫ কেজি মিনিকেট চাউল (৩২৫ টাকা) এবং ৯০ টাকা ডজন দরে ১২ টি ডিম (৯০ টাকা ) কিনলাম। সাথে ৩৫ টাকা দরে দুই কেজি দেশি আলু (৭০ টাকা) এবং ৩০ টাকা দিয়ে একটি বাধাকফি কিনলাম। সর্বমোট ৫০০ টাকার বাজার করলাম। ভাবলাম, প্রথম রোজ না হয় এভাবেই চালিয়ে দেই। পরবর্তীতে ভালো-মন্দ খাওয়ার চেষ্টা করবো। [ অনেকেই হয়তো ভাবতেছেন, এত নিখুঁত ভাবে টাকার অংক তুলে ধরছেন কেন ? আমি তাদের বলবো- ধৈর্য্য ধরে ভালো করে মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন, উত্তর নিজেই জানতে পারবেন।]
মেয়ের বয়স ৩ বছর ৪ মাস ৩ দিন। বার বার “মাংস খাবো” বলে ওর মাকে বলে। যদিও আমি নিজেও সেটা শুনি। দেশের অবস্থা তেমন ভালো না, ইনকামও তেমন নেই। তাই আর বেশি ভালো-মন্দ খাবার খাওয়া হয় না। একদম স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেছি।
৫০০ টাকার বাজার করার পর চলে আসার সময় এক সাহায্য আবেদন কারী আমার কাছে কিছু সাহায্য চাইলো। তাকে দেখে বুঝতে পারলাম, সে সত্যিই সাহায্য পাওয়ার যোগ্য । বাসায় যাওয়ার রিক্সা ভাড়ার জন্য ৫০ টাকা রেখে বাকি ৫০ টাকা আমি তাকে দান করে দিলাম। সে আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলো। নিজের কাছের ভালো লাগলো। মনে হলো হৃদয়টা আনন্দে ভরে গেল। সত্যি বলতে কি – কাউকে সাহায্য করতে পারলে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে।
বাজারের একদম শেষের দিকে মাংসের দোকান। মাংসের দোকান দেখে হঠাৎ ছোট্ট মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল । কাছে টাকা নেই জেনেও মাংসের দোকানের দিয়ে এগিয়ে গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম “মাংস কত টাকা কেজি ?” বললো- মামা, একদাম ৬০০ টাকা কেজি। দীর্ঘশ্বাস নিলাম, তাৎক্ষণিক দরিদ্র একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি এসে মাংসের দোকারদারকে বললো- “বাবা, আগামীকাল রোজা। বাবা-মা হারা ১২ বছরের এক নাতনি আছে, তাকে নিয়ে সেহরীর সময় মাংস দিয়ে ভাত খাবো। যদিও বেশি মাংস কেনার যোগ্যতা নেই। যা আছে তাই নিয়ে আসলাম।”
দোকানদার বললো- কত টাকা নিয়ে এসেছেন চাচা ?
লোকটি বললো – ১৫০ টাকা বাবা। আমাকে ২৫০ গ্রাম মাংস দাও আর খুব ছোট করে টুকরা করবে। দয়া করে হাড় কমিয়ে দিও বাবা।
লোকটি কথা গুলো খুব নরম ভাষায় বলতেছি। তার কথা শুনে ভাবলাম, আমি এমন এক হতভাগা বাবা, যে মেয়েকে ২৫০ গ্রাম মাংসও কিনে খাওয়াতে পারতেছি না। চোখের কোন জল ছল ছল করতেছে।
দোকারদার খুব রেগে গিয়ে লোকটির দিয়ে না তাকিয়ে বললো- ২৫০ গ্রাম মাংস বিক্রি করি না, এক কেজির নিচের কোন মাংস বিক্রি করা হয় না। অন্য জায়গায় যান।
কথাটা শুনে লোকটির মুখ কালো হয়ে গেল। লজ্জায় আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছিল। এহেন পরিস্থিতি দেখে আমার বুকের বাম পাশের মধ্যে চিন করে উঠলো। ব্যাথাটা থামানোর জন্য বুকের বাম পাশে ডান হাত দিয়ে চাপ দিলাম।
ডান হাত দিয়ে যখন বুকের বাম পাশে চাপ দিচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল, আমার পকেটে কিছু টাকা আছে। আমি পকেটে হাত দিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পকেটে দেখি দুইটি নোট। একটি ৫০ টাকার নোট, যেটি ৫০ টাকা দান করার পর বাকি ৫০ টাকা। আর একটি ৫০০ টাকার নোট। ৫০০ টাকার নোট কোথা থেকে এলো আমি নিজেও জানি না।
কোন কথা না বলে, আমি লোকটিকে ডাক দিলাম, বললাম – আপনার কাছে কত টাকা আছে দেন।
লোকটি আমাকে ১৫০ টাকা দিয়ে বললো, এর চেয়ে বেশি নেই।
আমি তাকে বললাম- আমার কাছে ৫০০ টাকা আছে, যা দিয়ে আমি নিজেও এক কেজি মাংস কিনতে পারবো না। একটি কাজ করেন, আপনার ১৫০ টাকা থেকে আমাকে ১০০ টাকা দেন। সে আমার কথায় ১০০ টাকা দিয়ে দিলো। আমি বললাম- আসুন, মাংসের দোকানে যাই। সে মুসকি হাসি দিয়ে দোকানের দিকে আমার সাথে আসতে লাগলো।
আমি দোকানে গিয়ে বললাম- আমাকে এক কেজি মাংস দিন। আর মাংস গুলো খুব ছোট ছোট করে টুকরা করবেন। দোকানদার আমার দিকে তাকিয়ে ঘটনাটি কিছুটা বুঝার চেষ্টা করলো। সে মাংস ছোট ছোট করে টুকরা করলো , বিষয়টি মানবতার দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করে দোকানদার হাড়ের পরিমান কম দিলো। এক কেজি মাপার পর পলিব্যাগের উঠানোর সময় আমি বললাম- এই এক কেজি মাংসকে সমান দু’ভাগে ভাগ করে দিন। আমার কথা অনুযায়ী সে তাই করলো। ৫০০ গ্রাম করে দুইটি ব্যাগে মাংস রাখলো। আমি লোকটিকে বললাম- আপনি কোন ব্যাগ নিতে চান , নেন।
টল-মল চোখে মনে ভিতর হাজার কথা থাকা সত্ত্বেও বাকশক্তি হারানো ব্যক্তির ন্যায় আমার মাথায় হাত দিয়ে শুধু এত…..টুকু বললেন – >>>>>>>“বেঁচে থাকো বাবা”।<<<<<<<
বলেই লোকটি মাংসের ব্যাগ নিয়ে চলে গেল, আমিও আরেকটি মাংসের ব্যাগ নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। দুপুর ১২ টার দিকে বাসায় আসার সাথে সাথে হোমমিনিস্টির বলবো- এত দেরি হলো কেন ? বললাম – দূরের বাজারের গিয়েছিলাম। তাই দেরি হলো। বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে ভিতরে মাংস দেখে আর কিছু বললো না।
দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় দেখলাম মাংস রান্না করেছে। আমি বললাম, এখন রান্না করেছো কেন ? বললো- সমস্যা নেই, খাও। সেহরীর সময়ও থাকবে। রাতের খাবারের সময় আবার মাংস দিয়েছে, রেগে গিয়ে বললাম। তোমার উদ্দেশ্য কি ? তুমি সেহরীতে মাংস খেতে দিবে না ?
হোমমিনিস্টার বললো- খাও । সমস্যা নেই। সেহরীর সময়ও থাকবে। আজকের মাংসে বরকত বেশি মনে হচ্ছে। কথা শুনে মনের মধ্যে আধ্যাত্মিক একটি ধাক্কা লাগলো। কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিলাম। সেহরীর সময় খেতে বসে দেখলাম সেই মাংস এখনো আছে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, সেহরীর সময় মাংস ও তরকারী বেশি হওয়ায় আমি বললাম- ভাত দাও । হোমমিনিস্টার বললো– ভাত শেষ হয়ে গেছে। তার প্লেট থেকে কিছু ভাত আমার প্লেটে দেওয়ার সময় আমি বললাম, থাক লাগবে না। মাংস বেশি হয়েছে তো, তাই জিজ্ঞাসা করলাম। আমার হোমমিনিস্টার (স্ত্রী) আবার কথাটি বললো- আজকের মাংসে বরকত অনেক বেশি ছিলো।
.
.
আমি জানি না-
- কেন আমি কাছে বাজার থাকতে দূরের বাজারে বাজার করতে গেলাম ?
- কেনই বা আমার কাছে এমন একজন সাহায্য কারীর আগমন ঘটলো ?
- টাকা না থাকতে কেনই বা আমি মাংসের দোকানে গেলাম ?
- কেনই বা অসহায় বৃদ্ধ লোকের সাথে সাক্ষাৎ হলো ?
- আর কোথা থেকে আমি এই ৫০০ টাকা পেলাম ?
সব কিছুই কেন জানি অদৃশ্য শক্তির কারুকার্য….!!!!
.
.
সব শেষে আপনাকে বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি , আমাদের এই ছোট্ট উদ্যোগটি আপনাদের যদি ভালো লাগে তবে সর্বদা আমাদের পাশে থেকে আমাদের সাহস বাড়াতে পোস্ট গুলোতে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করে আমাদের কাজের স্পৃহা আরো বাড়িয়ে দিতে আপনারা বিশেষ ভূমিকা রাখবেন এবং সেই সাথে আপনার একটি শেয়ার হয়তো আপনার নিকটস্থ কারো জন্য একটি নতুন দরজা খুলে দিতে পারে । সেই আশা বাদ ব্যক্ত করে সবাইকে আবারো ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিচ্ছি। আজ এ পর্যন্ত । সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন। দেখা হবে পরবর্তী নতুন কোন আর্টিকেলে। আল্লাহ হাফেজ।
.
.
.
আমাদের আরো পপুলার আর্টিকেল
-
রিজিক | আজকের মাংসে বরকত অনেক বেশি ছিলো | Heart Touching Real Story
-
গ্রুপে কিভাবে সেলার কোড পাবেন ? এটা পড়ুন। কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না।
-
সফল হওয়ার ৫ টি কার্যকরী টিপস || যদি সফল হতে চান তাহলে জীবনে এক বার হলেও পড়ুন
-
সফল লোকের ৪ টি অভ্যেস যা আপনার জীবন বদলে দিবে || 4 habits of successful people ll change your life
-
সফল হওয়ার মূলমন্ত্র। The key to success _ Motivational Speech _ By smalamgir
-
জীবনটা বড়ই অদ্ভুদ || হতাশা || হতাশা থেকে বের হোন নিজেকে নতুন আপনি তৈরি করুন
-
ফেসবুক পেইজ প্রোমোট || উদ্যোক্তাদের নাম ও তাদের ফেসবুক পেইজের নামের তালিকা
-
বিক্রয় বৃদ্ধির কিছু কার্যকরী উপায় সমূহ যা উদ্যোক্তাদের জানা জরুরী
-
পণ্য বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল । Easy step to increase product sales
-
একজন সফল উদ্যোক্তার করণীয়_ What a successful entrepreneur needs to do
-
বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল এবং ক্রেতার সাথে সম্পর্ক স্থাপন এর ১০টি কার্যকারী কৌশল _ By smalamgir
-
ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে মার্কেটিং করলে সফল হবেন? Digital Marketing
-
ইমেইল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে শুরু করবেন ? What is email marketing and how to get started?
-
ফেসবুক মার্কেটিং করার আগে যা জানা জরুরি_ How to easy step of Facebook Marketing
Model Test :
Health Tips :
-
গাইনেকোমাস্টিয়া ( পুরুষের বড় স্তন ছোট করার ) সার্জারী || Gynecomastia Surgery in Dhaka, Bangladesh.
জানি না কি বলবো বাকরুদ্ধ আমি।আল্লাহ্ তুমি তোমার বান্দা কে তৌফিক দান করো।আমিন
সত্যিই লেখাটি পড়ে বাস্তবতায় ঢুকে গেছিলাম।আল্লাহ তা’য়ালা চাইলে ৫০০ গ্রাম মাংসেও বরকত বাড়িয়ে দিতে পারেন।আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষকে সাহায্য করার তৌফিক দান করুন।আমিন।
কিছু বলার নেই। শুধু পড়লাম
সাহায্য করার ইচ্ছা থাকলে আল্লাহ তাকে সাহায্য করে।